শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ০৬:০৮ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
বৃহৎ ঐক্য গড়তে রাজপথে সঙ্গী বেছে নেবে বিএনপি

বৃহৎ ঐক্য গড়তে রাজপথে সঙ্গী বেছে নেবে বিএনপি

স্বদেশ ডেস্ক:

নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানে এক দফা দাবিতে শিগগিরই আন্দোলনে নামার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। এ লক্ষ্যে আগামী সপ্তাহে ২০-দলীয় জোট, ঐক্যফ্রন্ট, ডান, বাম ও ইসলামী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পৃথক মতবিনিময় করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। এ মতবিনিময়সভা করতে দলের একাধিক নেতাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এর পর এক দফা দাবির পক্ষে একটি রূপরেখা দিয়ে কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। ওই কর্মসূচিতে যেসব রাজনৈতিক দল একমত পোষণ করে মাঠে যুগপৎ আন্দোলনে থাকবে, সেই দলগুলোকে নিয়ে বৃহৎ ঐক্য বা জোট গঠন করা হবে।

সরকারবিরোধী বৃহৎ রাজনৈতিক ঐক্য গড়ার ক্ষেত্রে ২০-দলীয় জোট ও ঐক্যফ্রন্টের কাঠামো অটুট থাকবে- নাকি বিলুপ্ত করা হবে, জামায়াতকে আদৌ জোটে রাখা সম্ভব কিনা এমন প্রশ্নে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির গত শুক্রবার স্থায়ী কমিটির বিশেষ সভায় এ পরিকল্পনা করা হয়। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সভায় তর্কবিতর্ক, যুক্তি-পাল্টাযুক্তি এবং পরস্পরের বক্তব্য খÐন করে বিভিন্ন ধরনের বক্তব্য উঠে আসে। স্থায়ী কমিটির চার সদস্য জোট থেকে সরাসরি জামায়াতকে বাদ দেওয়ার পক্ষে মতামত দেন। বাকিরা বিরোধিতা না করলেও চ‚ড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে রাজনৈতিক লাভ-ক্ষতির হিসাব কষে আরও ভাবতে পরামর্শ দেন। এ অবস্থায় জামায়াতকে বাদ দেওয়া বা না দেওয়ার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি দলটির স্থায়ী কমিটির নেতারা। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যে মতবিনিময়সভা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, সেখানে আনুষ্ঠানিকভাবে জামায়াতের সঙ্গে মতবিনিময় না করার সিদ্ধান্ত হয়।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, নির্বাচনকালীন নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকারের দাবি এখন সবার। এ ইস্যুতে আমরা বৃহৎ ঐক্য গড়তে চাই। আমরা অনেক দলের সঙ্গে ইতোমধ্যে যোগাযোগ করেছি। কয়েকটি দল বিএনপির সঙ্গেও যোগাযোগ করেছে। শিগগিরই বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় শুরু করব। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দল বাদে সব দলকে আমন্ত্রণ জানানো হবে। এমনও হতে পারে বিএনপির প্রতিনিধি দল রাজনৈতিক দলগুলোর কার্যালয়ে গিয়ে মতবিনিময় করতে পারেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামীর ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু আমাদের সময়কে বলেন, ‘সভায় কোনো বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে রাজপথে যারাই থাকবে, তাদের নিয়েই আমরা বৃহত্তর জোট গঠনের চিন্তা করছি। এ ব্যাপারে একটি রূপরেখা দেওয়া হবে, এটা আমাদের মহাসচিব বলবেন।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, বৃহত্তর জোট গঠনের জন্য দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা চলছিল। তবে তা হচ্ছিল না। সরকার নিজেদের পছন্দমতো ইসি গঠনে আইন করে আবার একতরফা নির্বাচনের দিকে যাচ্ছে। আইন পাসের পর তারা তাগিদ অনুভব করেন যে এই সরকারকে আর বেশি দিন সময় দেওয়া যায় না। এক দফা নিয়ে আন্দোলনে নামা ছাড়া সামনে বিকল্প নেই।

স্থায়ী কমিটি একাধিক নেতা বলেন, বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটে জামায়াত থাকায় বাম রাজনৈতিক দলগুলো তাদের আপত্তির কথা বিভিন্ন সময়ে প্রকাশ করেছে। বিভিন্ন সময়ে প্রতিবেশী দেশ ভারতসহ পশ্চিমা দেশসমূহ জামায়াত বিষয়ে নেতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে। এ অবস্থায় আফগানিস্তানে তালেবান শাসকদের উত্থানে বিশ্বরাজনীতির মোড় কোনো দিকে যায়, সেদিকে তীক্ষè নজর রাখে দলটির নীতিনির্ধারকরা। পাশাপাশি জামায়াত বিষয়ে আলোচনা বন্ধ রাখে দলটি। এ অবস্থায় গত সোমবার দলের ভার্চুয়াল বৈঠকে জাতীয় ঐক্য গঠন ও জামায়াত প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনা ওঠে। সেখানে কয়েক নেতার মতামতের পর আরও আলোচনা করার সিদ্ধান্ত হয়। ওই সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গত শুক্রবার রাতে স্থায়ী কমিটির এ বিশেষ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভাসূত্রে জানা যায়, শুরুতেই জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০-দলীয় জোট ভেঙে দিয়ে জামায়াতকে বাদ দেওয়ার পক্ষে মতামত দেওয়া হয়। এর পর একে একে আরও তিন নেতা প্রায় একই ধরনের মতামত দেন। এ অবস্থার মাঝে একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতার মতামত ছিল কেন আমরা জোট ভেঙে দেব, এখানে আমাদের রাজনৈতিক ফায়দা কী? আমরা তো গড়তে চাই, ভাঙতে নয়। একজন নেতা তার মতামত দিতে গিয়ে বলেন, কাউকে খুশি করতে গিয়ে দীর্ঘদিনের জোটসঙ্গী জামায়াতকে বাদ দেওয়া রাজনৈতিকভাবে কতটা যুক্তিযুক্ত তা নিয়ে আরও ভাবতে হবে। আরেক নেতা বলেন, যেখানে গত ১৫ বছর ধরে সরকার জোট ভাঙতে পারেনি, সেখানে আমরা কেন নিজে থেকে জোট ভেঙে দেব- এসব যুক্তি-তর্কের পর আরও আলোচনা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

এ নিয়ে দলের গুরুত্বপূর্ণ এক নেতা বলেন, রাজনীতিতে জামায়াত একটি শক্তি। ইচ্ছে করলেই তাকে বাদ দেওয়া যায় না। সে ক্ষেত্রে যারা জামায়াত বাধা বলছে, তারা কী বৃহৎ ঐক্য প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত হবে। সেটি যদি না হয়, তা হলে হিতেবিপরীত হবে। এ অবস্থায় দেশে-বিদেশি সব মহলের নিশ্চয়তা পেলেই কেবল জামায়াতকে বাদ দেওয়া যেতে পারে। সেটিও সমঝোতামূলক হতে হবে।

ওই নেতা আরও বলেন, বিএনপি নিরপেক্ষ সরকার দাবিতে রূপরেখা ঘোষণার পর দেখতে হবে কোনো দলের কী ভ‚মিকা। সেখানে জামায়াত কী ভ‚মিকা রাখে সেটিও বুঝতে পারা যাবে। এর পর বৃহৎ ঐক্যপ্রক্রিয়া গঠনকালে জামায়াত বিষয়ে কারও কোনো বক্তব্য থাকলে এবং যুক্তিসঙ্গত কারণ দেখাতে পারলেই কেবল জামায়াতকে বাদ দেওয়া যেতে পারে। তা ছাড়া জামায়াত ছাড়বে না বিএনপি।

যদিও স্থায়ী কমিটির কয়েকজন নেতা বলেন, বৃহত্তর ঐক্য ইস্যুতে বামসহ বেশ কয়েকটি দলের সঙ্গে বিএনপি অনানুষ্ঠানিক আলোচনা করেছে। তারা জামায়াত থাকলে ঐক্যে আসবে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন। অবশ্য নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য জানান, বৃহত্তর ঐক্যে যুদ্ধাপরাধী সংগঠন জামায়াতে ইসলামী বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেখানেও কৌশল অবলম্বনের কথা ভাবছে বিএনপি। আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের আমন্ত্রণ জানানো হবে না। তবে দূরে ঠেলে না দিয়ে সমঝোতার ভিত্তিতে কৌশলে বোঝাপড়া করে তাদের সঙ্গে পথ চলবে বিএনপি।

বিএনপি ২০-দলীয় ঐক্য জোট ও জাতীয় ঐক্য ফ্রন্ট নামের দুটি জোট আছে। এ দুই জোটকে সঙ্গে রেখে কোনো ফর্মে বৃহত্তর জোট হবে, তা এখনো ঠিক হয়নি বলে জানান বিএনপির আরেক নেতা। এ নেতার মতে, এ বিষয়ে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। আর যে যেখানে আছেন, তাদের সবার সঙ্গে এক দফা নিয়ে আলোচনা করেই বৃহত্তর জোট গঠন করা হবে। কাউকে বাদ দেওয়া হবে না। যে যার অবস্থান থেকে ভ‚মিকা রাখবেন- এ নিয়েও আলোচনা হয়েছে। দলের একজন যুগ্ম মহাসচিব বলেন, সবার কাছ থেকে নিশ্চয়তা পেলেই কেবল জামায়াতকে বাদ দেওয়া হবে। এর পর দেখা যাবে আওয়ামী লীগ সরকার তাদের নিয়ে কী গেম খেলে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877